শহীদনূর আহমেদ
সুযোগ পেলেই গ্রামের বাড়িতে যাই। ঘুরে বেড়াই এপাড়ায় ওপাড়ায়। এলাকার সমস্যাগুলো অবলোকন করি, শহরে এসে চেষ্টা করি পত্রিকার পাতায় তুলে ধরতে। গ্রামে গেলে প্রতিবেশি, পরিচিতজনসহ সকল স্তরের লোকদের একটু বেশি আধিক্যেতা পাই। সাধারণের চোখে নিজের প্রতিচ্ছবি অন্যভাবে দেখি। কেন জানি অন্যদের চেয়ে স্নেহ, ভালোবাসা আর সম্মানেন মাত্রা একটু বেশি পেয়ে থাকি গ্রামবাসীর কাছ থেকে। অনেকেই বাপমায়ের রাখা নাম ধরে না ডেকে সাংবাদিক বা সাংবাদিক সাব বলে ডাকতে শুনি। বাজার বা দোকানে গেলেই আপ্যায়ন করার চেষ্টা করেন। যাদের আমি ছেলের বয়সী তারাও মমতার স্বরে উপদেশ আর আর্শিবাদ করেন।
ঠিক তেমনি শহরে যে পাড়ায় থাকি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এমন অনুভব বোধ করি ।
পেশাগত কাজে যখন অফিস আদালতে যাই তখন কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্তরিকতা পরিলক্ষিত করি।
বলছিলাম যা তা কিন্তু আমার ব্যক্তিগত কারনে নয়। এ সম্ভব হয়েছে সাংবাদিকতার মতো একটি মহান পেশায় আছি বলে।
যে কয়েকটি পেশাকে সাধারণ মন থেকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন তাঁর মধ্যে সাংবাদিকতা অন্যতম। মানুষ নির্যাতিত, বঞ্চিত আর বিপদগ্রস্ত হলে যেই মানুষগুলোকে সাহায্যকারি হিসেবে প্রথমেই অনুধাবন করেন সাংবাদিক থাকেন তার অগ্রভাগে। এখনও পর্যন্ত সকল সূচকে এই পেশাটি গ্রহণযোগ্যতায় আছে।
পড়াশোনা শেষ করে অনেক বন্ধু পুলিশ, আইনজীবী, ব্যবসায়িসহ বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হয়েছেন। অনেকেই মাস শেষে লম্বা বেতন পান।
তাদের চেয়ে আয় উপার্জনে পিছিয়ে থাকলেও সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় নিজেকে জড়িয়ে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। কিছু পাই আর না পাই সুখানুভব পাই। যা বিত্তবৈভব দিয়ে কেনা সম্ভব নয়।
মহান এই পেশাটিতে এখন অনেক বেপাস মানুষের আগমন ঘটছে। যারা পেশাদারিত্বের চেয়ে বাহ্যিক নাম ডাকের প্রতিষ্ঠা করতে চান। নীতি নৈতিকতা ভুলে এই পেশাটিকে টাকা উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অপতৎপরতা চালি থাকেন । যার ফলে মহান এই পেশার আগেপিছে লাল, হলুদ রঙিন শব্দ ব্যবহার হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সাংবাদিকতার ভাবমূর্তি কমবে বৈকি বাড়বে না।
অন্যান্য পেশাজীবীর মতো সাংবাদিকতাও বিচ্ছিন্নতা, গ্রুপ, কোন্দল পরিলক্ষিত। সুনামগঞ্জও তাঁর ব্যাতিক্রম নয়। সাংবাদিকদের ফাদার সংগঠন প্রেসক্লাব দ্বিধা বিভক্ত। যেখানে মাঠে সক্রিয় সাংবাদিকদের চেয়ে সাংবাদিক নেতারা প্রাধান্য পাচ্ছেন। মাঠে সক্রিয়রা এক কাফেলায় অবস্থান করতে চাইলেও প্রেস পলিটিক্সের জটিল সমীকরণে এক হতে পারছেন না। ফলে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখতে তেমন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
এমন অবস্থায় জেলা শহরে কর্মরত সাংবাদিকদের সমন্বিত করতে ভূমিকা রেখেছে সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি। জেলা ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালে। সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে এক ছাদের নিচে মিলিত হয়েছেন অধিকাংশ সাংবাদিক৷ জেলার সর্ববৃহৎ সাংবাদিক সংগঠনের রূপ নিয়েছে সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি।
বলতেগেলে জেলা শহরের মূলধারার ৯৫ ভাগ
সাংবাদিক এখন এই সংগঠনের ছায়াতলে। সংগঠনের দায়িত্বশীলদের কর্মনিষ্ঠতা আর দক্ষ নেতৃত্বে নিজেস্ব ভবন হয়েছে, তহবিল গঠিত হযেছে, যা সত্যিকার অর্থেই সাংবাদিকদের উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রাখবে।
সংগঠনের একজন সারথি হিসেবে গর্ববোধ করি৷ আমি মনে করি আমার মতো অন্যান্য সদস্যদের সাংগঠনিক ও পেশাগত ভিত শক্তিশালী করতে যুগান্তকারী অবদান রাখবে এই সংগঠন।
দেশের সাংবাদিকঅঙ্গনের দুঃসময়ে ঐক্যবদ্ধ কলমওলাদের সংগঠন সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির তিন বছর পূর্তি চারটে খানে কথা নয়। যোগ্য নেতৃত্ব আর কলম সৈনিকদের দাবি আদায়ে সোচ্চার থেকে সংগঠনটি যাত্রা শতকাল হোক। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রইলো শুভকামনা৷