দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মিনাবাজার (আক্তাপাড়া) কৃষি ব্যাংকের পল্টু দাশ (১৯) নামের এক নিরাপত্তা প্রহরীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে ৯ টায় ব্যাংকটির নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষে রহস্যজনক এই ঘটনাটি ঘটে। ব্যাংক প্রহরির এমন রহস্যজনক মৃত্যুতে ওই এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবার ও পুলিশসূত্রে জানা যায়, নিত্যদিনের মতো রবিবার দিনের কার্যক্রম শেষ করে দর্গাপাশা ইউনিয়নের মিনাবাজার সংলগ্ন নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত পতন দাশের ছেলে নিরাপত্তা প্রহরী পল্টু দাশ নিজ বাড়িতে চলে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ব্যাংকের অপর নিরাপত্তা প্রহরী জাকির হোসেন তাকে মুঠোফোনে কল করে বাড়ি থেকে বাজারে নিয়ে আসে। এরপর সে আর বাড়ি ফেরেনি জানায় পল্টুর পরিবার। রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টায় তার চাচা অতুল দাশ পল্টুর বন্ধু আক্তাপাড়া গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে মাসুমের কাছে পল্টু কোথায় জানতে চাইলে মাসুম জানায়, পল্টু ব্যাংকের একটি কক্ষে শুয়ে আছে। তাকে ডেকে আনতে বললে মাসুম সেখানে গিয়ে পল্টুর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে এবং তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পায়। পরে সে আশপাশের লোকজনকে ডাক দিলে তারা পল্টুকে উদ্ধার করে কৈতক ২০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় ডাক্তার তার গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে এটাকে স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বলে জানান এবং লাশের ময়নাতদন্তের পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে নিহতের পরিবার থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ময়না তদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে নোয়াগাঁও শ্মশানঘাটে নিহত পল্টু দাশের লাশের দাহ করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে বইছে শোকের মাতম। স্বামীহারা পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ বৃদ্ধা মা। কান্নায় বার বারই মোর্চা যাচ্ছেন তিনি । ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, জাকির আমার ছেলেকে ফোন দিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর আমার কলিজার টুকরা ছেলে ফেরত আসেনি। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই।
ব্যাংকের অপর নিরাপত্তা প্রহরী জাকির হোসেন বলেন, আমি ফোন করে এনেছিলাম ঠিক। তাকে ঔষধ আনতে পাগলা বাজার পাঠিয়ে আমি শান্তিগঞ্জে থানায় চলে যাই। ঔষধ আনলো কি না এ কথা জানতে শান্তিগঞ্জ থেকে আমি পল্টুর ফোনে কল দিলে তখন মাসুম ফোন রিসিভ করে । মাসুম পল্টুর সাথে সব সময়ই থাকে। ফোনে পল্টুর অসুস্থতার খবর পেয়ে আমি আমি দ্রুত আক্তাপাড়ায় আসি।
পল্টুর বন্ধু মাছুম আহমদ বলেন, পল্টু আমার বন্ধু। আমি রাতে বাজার থেকে বাড়িতে চলে যাচ্ছিলাম। তখন পল্টুর কাকা অতুল দাশ আমাকে পল্টুকে ডাকতে পাঠান। আমি রুমে গিয়ে দেখি পল্টুর মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। তখন আশপাশের লোকজনকে ডাক দেই।
বাজারের ব্যাবসায়ী কমিটির সভাপতি এ এল জি জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের এলাকায় এর আগে এমন ঘটনা কখনোই ঘটেনি। যদি এটি হত্যাকান্ড হয় তাহলে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করার দাবী জানাই এবং হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবি জানাই।
আক্তাপাড়া (মিনাবাজার) কৃষিব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বলেন, পল্টু একটি ভালো ছেলে ছিলো। দিনে ডিউটি করে আমরা বিকালে চলে গিয়েছিলাম। তখনো পর্যন্ত সককিছু স্বাভাবিক ছিলো। রাত ১০টার দিকে এ খবর শুনে খুবই খারাপ লাগে। যদি এটি হত্যাকান্ড হয় তাহলে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি করছি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোক্তাদির হোসেন বলেন, এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠিয়েছি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে প্রহরী পল্টুর মৃত্যুতে ক্ষোব্ধ এলাকাবাসী আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকাল ১০ টায় আক্তাপাড়া বাজারে মানববন্ধন কর্মসুচীর ডাক দিয়েছেন।